Wednesday, January 14, 2015

ব্যবসা সম্পর্কিত প্রচলিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

ব্যবসা সম্পর্কিত প্রচলিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন : আমি ব্যবসা করতে চাই। কী ধরনের ব্যবসা করা উচিত?


উত্তর : যে ব্যবসার মধ্য দিয়ে আপনি একজন মানুষকে সেবা দিতে পারবেন, প্রতারণা নয়। একটা ভালো পণ্য একজনের হাতে তুলে দেয়াটাও একটা সেবা, একটা ইবাদত। একটা ভালো খাবার একজনের হাতে তুলে দেয়াটাও একটা সেবা। কিন্তু সফট ড্রিংকস, এনার্জি ড্রিংকস, মদ বা ড্রাগস তুলে দেয়াটা সেবা নয়। অতএব যেখানে আপনি সেবা করতে পারবেন সততার সাথে সেটাই আপনার ব্যবসা হতে পারে। প্রতিটি ব্যবসাতেই সেবা করার সুযোগ আছে, যদি আপনার সে মানসিকতা থাকে।


 


 


প্রশ্ন : আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করি। আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা চাকরির পর ব্যবসা করবো।


উত্তর : অধিকাংশ চাকরিজীবী এই ভুলটা করেন। এ কারণে তাদের পেনশনের টাকা তারা ভোগ করতে পারেন না। কারণ যখন পেনশনের টাকা বা গ্রাচুয়িটির টাকা পান-এই ১০, ১৫ বা ২০ লাখ টাকা তারা কোনো আংকেল, ভাতিজা বা ছেলের বন্ধুর সাথে ব্যবসায় খাটান এবং এই টাকাটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। যত রিটায়ার্ড অফিসার বিনিয়োগ করেছেন, এর ৯৯ ভাগই তাদের বিনিয়োগ ফেরত পান নি।


কিছু পুঁজি নিয়ে যেকোনো একটা কিছু শুরু করে দিলেই সেটা ব্যবসা হয় না। ব্যবসায় সফলতা পেতে হলে ব্যবসা বুঝতে হয়, অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। প্রতিটি ব্যবসার যে নিজস্ব সাফল্যের গোপন রহস্য আছে, সেটা জানতে হয়। ধরুন, আপনি একটি সফটওয়্যার ফার্ম খুললেন। আপনি যদি এ সম্পর্কে না জানেন, ইঞ্জিনিয়ার হয়তো তিন মিনিটের কাজকে বলবে-এটা অনেক কঠিন কাজ, জটিল কাজ, তিন মাস লাগবে। আপনি যেহেতু জানেন না এটা তিন মাস লাগবে না তিন মিনিট লাগবে, আপনার তাকে বিশ্বাস করা ছাড়া উপায় থাকবে না। আপনার ব্যবসায় লস হবে।


সারাজীবন চাকরির পর ব্যবসা করাটা আপনার পক্ষে সহজ নয়। এই টাকা ব্যবসায় না খাটিয়ে ব্যাংকে রেখে দিলেই তো আপনার মাসের খরচের টাকা উঠে আসে। আর অবসরে না গিয়ে পুরো সময়টাই আপনি আত্মিক উন্নয়ন ও সৃষ্টির সেবায় ফাউন্ডেশনে কোয়ান্টিয়ার হিসেবে আত্মনিয়োগ করতে পারেন। এতে আপনি একদিকে যেমন সুস্থ থাকবেন, অন্যদিকে আপনার পারলৌকিক মুক্তির পথও প্রশস্ত হবে।


 


 


প্রশ্ন : চার বছর বিদেশে ছিলাম। এখন বাংলাদেশে চলে এসেছি। কষ্টার্জিত অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করবো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। ভয় হয় যদি লস হয়। এ ব্যাপারে আপনি কোনো উপদেশ দিলে উপকৃত হবো।


উত্তর : কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ না করে এই অর্থের সাথে কীভাবে শ্রম বিনিয়োগ করতে পারেন সে চিন্তা করুন। শুধু টাকা বিনিয়োগ করলে হয় না। এর সাথে শ্রম ও বুদ্ধি বিনিয়োগ করতে হবে। আর ব্যবসা করার আগে ব্যবসা বুঝতে হবে। প্রত্যেকটা ব্যবসার রহস্য আছে। সেই রহস্যটি বুঝতে হবে। ব্যবসায় নামার আগে, বিনিয়োগ করার আগে তাই ব্যবসাটা বোঝার চেষ্টা করুন। অথবা সেই ব্যবসাই শুরু করুন যা আপনি বোঝেন, সেটা যত ছোটই হোক না কেন। তাহলে আপনি টাকাকে পুঁজিতে রূপান্তরিত করতে পারবেন।


 


 


প্রশ্ন : আমি যে চাকরিটা করছি তাতে বেতন ভালো কিন্তু কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমি এটা বদলে এমন কিছু করতে চাই যা ক্যারিয়ারকে অনেক দূর নেবে। ভাবছি স্বাধীন ব্যবসা করবো। কিন্তু পরিবারের সহযোগিতা পাওয়া যাবে কি না জানি না। এদিকে চাকরিতে মোটেও মনোযোগ দিতে পারছি না।


উত্তর : পরিবারের সহযোগিতার অপেক্ষায় যদি থাকেন তাহলে ব্যবসায় সফল হবার সম্ভাবনা কম। ব্যবসা করার জন্যে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। পৃথিবীতে যত বিত্তবান দেখবেন, তারা সবাই শুরু করেছেন শূন্য থেকে।


বিল গেটস কত টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন? অথচ আমরা জানি, সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে তিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধনকুবের। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট। পত্রিকার হকারি থেকে ২৫ ডলার জমিয়ে ১৪ বছর বয়সে তিনি একটা যন্ত্র কেনেন। এই হলো ব্যবসার শুরু। আজ তিনি দুই লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকার মালিক।


মুন্নু সিরামিকের হারুনুর রশীদ খান মুন্নু, ৭৫ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আকিজ মিয়া বিড়ি বানাতেন। পরে অন্য ব্যবসা ছাড়াই শুধু বিড়ি ফ্যাক্টরি থেকেই বছরে ছয় কোটি টাকা ট্যাক্স দিতেন আজ থেকে ১৫ বছর আগে। তারা তো কারো কাছে হাত পাতেন নি।


অর্থাৎ আপনাকে শুরু করতে হবে যা আছে তা দিয়ে। আপনি যদি মনে করেন পরিবার আমাকে সহায়তা করছে না, ঠিক আছে, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আমি গার্মেন্টস বিক্রি করবো। তাহলে আপনি বায়িং হাউস করতে পারবেন। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি করতে পারবেন, সবকিছু করতে পারবেন।


 


 


প্রশ্ন : আমি অনার্স শেষ করে সম্প্রতি মাস্টার্সও পাশ করেছি। পেশাগত জীবনে আমার ইচ্ছা উদ্যোক্তা হওয়া। কিন্তু বার বার বিভিন্ন ভীতি মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। কোনো সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারছি না। অনেকে বলছে-আগে চাকরি করে পরে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিও। কিন্তু এটি আমার আবেগ ও ভীতির মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। কীভাবে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে আমি উদ্যোক্তা হতে পারি? এক্ষেত্রে বাস্তব পদক্ষেপ কেমন হতে পারে? উল্লেখ্য, আমি কোনো কাজ একটু করার পর পূর্ণ গতি থাকে না। এটা কীভাবে দূর করা সম্ভব?


উত্তর : আগে ঠিক করতে হবে আপনি কী করবেন এবং ব্যবসা আপনি বোঝেন কি না। ব্যবসা যদি ফুটপাত থেকে শুরু করতে পারেন, আপনি খুব ভালো উদ্যোক্তা হতে পারবেন। কারণ সংকোচ জড়তা সিদ্ধান্তহীনতা থাকলে কেউ ব্যবসা করতে পারে না, কেউ উদ্যোক্তা হতে পারে না। সিদ্ধান্ত নেয়ার নাম হচ্ছে উদ্যোগ। সবসময় মনে রাখবেন, পৃথিবী সাহসী মানুষের জন্যে এবং যে ব্যবসা করতে চান সেটা শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।


আমরা অধিকাংশই ভুল করি কোথায়? আমরা টাকাপয়সা যোগাড় করে ব্যবসা শুরু করি। আমরা সবসময় মনে করি যে, এই করবো, ওই করবো, রিভলভিং চেয়ার থাকবে সেখানে বসবো। তিনটা টেলিফোন থাকবে, পাঁচ জন সেক্রেটারি থাকবে। যার ফলে ব্যবসা হয় না, টাকাপয়সা নষ্ট হয়।


ব্যবসার জন্যে শুরুতেই টাকার কোনো প্রয়োজন নেই। রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ুন। আপনি ব্যবসা করতে পারবেন। রাস্তা থেকে আপনি প্রাসাদে উঠবেন।


আমাদের দেশে উদ্যোক্তা কী রকম? একজন তার বন্ধুকে বলছে যে, চল, আমরা তিন বন্ধু মিলে ফ্যাক্টরি বানাবো। প্রস্তাবটা খুব মজার। বন্ধুর জায়গাটা ব্যাংকের কাছে বন্ধক দিয়ে লোন নেবে। সেই লোন থেকে প্রথমে তিন বন্ধু তিনটা লেক্সাস গাড়ি কিনবে। এই হচ্ছে ব্যবসার শুরু! এদের না কোনোদিন ফ্যাক্টরি হবে, না সে ঋণ কোনোদিন শোধ হবে। আসলে যে ব্যবসা শূন্য থেকে শুরু হয় তা-ই এগিয়ে যায় পূর্ণতায়।


সাহস এবং বিশ্বাস ছাড়া উদ্যোগ নেয়া যায় না। মরলে এর সাথে মরবো, বাঁচলে এর সাথে বাঁচবো-এই চিন্তা আপনাকে অমর করবে। যে জিনিসের জন্যে জীবন দিতে প্রস্ত্তত থাকবেন সেই জিনিস আপনাকে অমর করবে।


 


 


প্রশ্ন : আমি বিগত আট বছর যাবত ব্যবসার সাথে জড়িত। ব্যবসাগত লেনদেনে আমি নিজে সবসময় পরিশোধ করি সঠিক সময়ে। কিন্তু আমার পাওনা খুব কমই আমি সময়মতো পাই। যার জন্যে আমাকে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়। এ ব্যাপারে আমার করণীয় কী


উত্তর : ব্যাপারটা খুব সহজ। আমি আগে কোনো কাজ করালে মজুরি যা হবে সব দিয়ে দিতাম। দেখতাম, কাজটা পাঁচ দিনেও হয় না। পরে বুঝলাম, সে যেহেতু মজুরি পেয়েই গেছে অতএব কাজটা তার কাছে গুরুত্বহীন হয়ে গেছে। একজন পরামর্শ দিলেন যে, এ সমস্ত ক্ষেত্রে কাজ হওয়ার আগে দেবেন ১০%, হওয়ার পরে দেবেন ৯০%। দেখবেন, আপনার কাজটা সময়মতো হয়ে যাবে। দেখলাম যে, তা-ই হচ্ছে।


আপনাকেও এরকম কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ জিনিসপত্র দিলেও একটু প্যাঁচ রেখে দিতে হবে যাতে সে টাকাটা দিতে বাধ্য হয়। আবার আটকে রাখছেন এটাও বোঝানো যাবে না।


 


 


প্রশ্ন : স্বাধীন পেশা বা ব্যবসা করার পূর্বে চাকরি করা প্রয়োজন, এতে ব্যবসা শেখা যায়-এ সম্পর্কে জানতে চাই।


উত্তর : এটা ঠিক। তবে সেক্ষেত্রে আপনি যে ব্যবসায় যেতে চান সে ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট জায়গায় আপনাকে চাকরি করতে হবে। আপনি যদি ফটোগ্রাফির ব্যবসায় যেতে চান, তাহলে ফটোগ্রাফির দোকানে চাকরি নিতে হবে। কাজটা আপনাকে শিখতে হবে, কাজের রহস্যগুলো বুঝতে হবে, বুঝে তারপর ব্যবসা করতে হবে।


অর্থাৎ যেকোনো ব্যবসায় নামার আগে সে ব্যবসা বুঝতে হবে এবং যে চাকরিতে গেলে এই ব্যবসা সবচেয়ে সুন্দরভাবে বোঝা যাবে, বেতন যা-ই হোক তাতেই যেতে হবে।


আর ব্যবসায় সফল হওয়ার কৌশল খুব সহজ। সনাতন ধর্ম অনুসারে ব্যবসার দেবতা গণেশ। গণেশের দেহটা মানুষের, আর মাথাটা হাতির। অর্থাৎ দেহটা মানুষের আর মাথাটা পশুর। অতএব ব্যবসা করতে হলে দেহটুকুই মানুষের থাকবে-যদি খুব বড়, অনেক বড় ব্যবসা করতে চান। সাধারণভাবে আপনার মধ্যে পশুর যে ঝঁৎারাধষ ওহংঃরহপঃ-এটা তীব্র থাকতে হবে যে, ব্যবসা ছাড়া আপনি আর কিছু বোঝেন না। আপনি ব্যবসাতে তখন খুব ভালো করবেন।


ব্যবসায়ে সফল হতে হলে যে সূত্রে আপনাকে এগুতে হবে তা হলো- পুঁজি + উদ্যম + শ্রম + ব্যবস্থাপনা + বিপণন।


 


 


প্রশ্ন : বন্ধুদের দেখাদেখি শুরু করেছিলাম ফ্যাশন ওয়্যারের বিজনেস। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা দামি মার্কেটে সাজানো-গোছানো দোকানের খরচ ওঠাতেই ধার-দেনার অবস্থা। এখন কী করবো?


উত্তর : আপনি এখানেই ভুল করেছেন। ব্যবসা করতে গিয়ে হুজুগে মেতে ওঠার প্রবণতাটা আমাদের অনেকেরই আছে। সবাই যেখানে যাচ্ছে সে ব্যবসার পেছনেই আমরা ছুটি। কিন্তু এটা বুঝতে হবে যে, প্রতিটি পাত্রের যেমন একটা ধারণক্ষমতা আছে, তেমনি প্রতিটি খাত বা ব্যবসার চূড়ান্ত মাত্রা বা ধারণক্ষমতা আছে যার পরে আর ঐ ব্যবসায়ে বিস্তৃতির কোনো সুযোগ থাকে না। যারা প্রথমে যায়, তারাই মূলত লাভবান হয়। পরে যারা আসে তাদের আখেরে তেমন কিছুই জোটে না।


বাংলাদেশে যখন আশির দশকে প্রথম গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু হলো, আমি যেহেতু এস্ট্রলজি চর্চা করতাম, অনেককেই বললাম-গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি করুন। তারা বললেন যে, ‘কী! দর্জির দোকান দেবো আর বাড়ির মেড-সার্ভেন্টদের চাকরি দেবো’? তারা গার্মেন্টস ব্যবসায় গেলেন না। আর যারা গেলেন সেই প্রথম উদ্যোক্তারাই কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন।


যখন প্রথম কেউ একটা জিনিস শুরু করে, সবসময় মাখন সে-ই পেয়ে যায়। যেরকম-মোবাইলের প্রথম মাখন খেলো সিটিসেল, ১০ বছর। তারপরে মাখন যেটুকু ছিলো-গ্রামীণ। এখন হাড্ডি নিয়ে কামড়াকামড়ি হচ্ছে, তারপরেও আরো নতুন নতুন কোম্পানি আসছে। গ্রামীণ যা লাভ করে গেছে! একটু চিন্তা করে দেখুন যে, প্রতি মিনিটে কলরেট একসময় ছিলো- একটা জোনের মধ্যে চার টাকা, ইন্টারজোন হলে ১২ টাকা। তারপর তারা বললো, ওয়ান কান্ট্রি ওয়ান মোবাইল ওয়ান রেট-সাত টাকা। এখন ওয়ান কান্ট্রি ওয়ান মোবাইল ওয়ান রেট এক টাকার কম। তারপরও তো তারা লাভ করছে। তাহলে যখন সাত টাকা ছিলো, কী পরিমাণ লাভ করেছে? এটা কেন? যেহেতু তারা আগে এসেছে। অর্থাৎ ব্যবসার জন্যে প্রয়োজন নতুন আইডিয়া খুঁজে বের করা।


২০ বছর আগের কথা। এক যুবক ভুয়া আদমব্যাপারীর পাল্লায় পড়েছিলো। বিদেশে গেল, ওখানে গলাধাক্কা খেয়ে ফিরে এসে আমার সাথে দেখা করতে এলো। তাকে বললাম, আপনি কী করতে পারবেন? কী আছে আপনার? যা আছে তা নিয়েই শুরু করুন।


সে বললো, গ্রামে আমার এখনো একটা বাড়ি আছে, একটা পুকুর আছে। পুকুরের পাশে আমার বিঘাখানেক জমি আছে।


বললাম, চিন্তা করুন-এ থেকে কী করা যায়। খুব বুদ্ধিমান ছিলো সে। বললো, আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। আমি কাউকে জানাতে পারছি না। যাকে বলি সে-ই বলে পাগল।


আমি বললাম, খুব ভালো। আমি তো এরকম পাগলদের খোঁজই করি সবসময়। সে বললো, আমার এই পুকুরটাকে দুই ভাগ করবো। একভাগে মাগুর মাছ চাষ করবো, আরেকভাগে ব্যাঙ চাষ করবো। এর সাথে কেঁচোর চাষ করবো। ব্যাঙের তো পা ছাড়া অন্য অংশ কাজে লাগে না। এগুলো মাটিতে পুঁতে দেবো দুই পুকুরের মাঝখানে, যেখানে কেঁচো থাকে। কেঁচো এগুলো পছন্দ করে, কেঁচো এগুলো খাবে। আবার, ব্যাঙ কেঁচো খুব পছন্দ করে। ব্যাঙ কেঁচো খায়। ব্যাঙকে কেঁচো খাবে আবার কেঁচোকে ব্যাঙ খাবে। একটা খাদ্যচক্র। ব্যাঙাচি হচ্ছে মাগুর মাছের সবচেয়ে প্রিয় খাবার। প্রচুর ব্যাঙাচি হবে, ওদেরকে মাগুর মাছ খাবে।


তার যে টাকা নষ্ট করেছিলো সেই টাকা দুই বছরে উসুল হয়ে গেল। ব্যাঙাচি খেলে মাছ খুব দ্রুত বাড়ে। মাগুর মাছ খুব দ্রুত বাড়তে লাগলো। মাগুর মাছ বিক্রি করছে, ব্যাঙের পা বিক্রি করছে। ব্যাঙের অবশিষ্টাংশ মাটিতে পুঁতে দিচ্ছে। সেটা খেয়ে কেঁচো বড় হচ্ছে। কেঁচো খেয়ে ব্যাঙ বড় হচ্ছে। ব্যাঙাচি খেয়ে মাগুর মাছ বড় হচ্ছে।


চার/ পাঁচ বছর পরে আবার সে এলো, চমৎকার চেহারা। বললো, এখন আমার কোনো অভাব নেই। এখন আমি চিন্তা করছি নির্বাচনে দাঁড়াবো।আমি বললাম, নির্বাচন করে কী হবে? সে বললো, এখন তো আল্লাহর রহমতে টাকাপয়সার অভাব নাই। আমি বললাম, টাকাপয়সা বাড়াতে থাকেন। মানুষের কিছু উপকার করেন। সে বললো, উপকার করার জন্যেই তো নির্বাচন। আমি বললাম, নির্বাচন করে উপকার করতে পারবেন না। নির্বাচন করতে গেলেই আপনার উপকারের পরিমাণ কমে যাবে। কারণ যারা আপনাকে নির্বাচিত করবে তখন তাদের ফুট-ফরমায়েশ, তাদের মনোরঞ্জন করতে করতে আপনার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।


চিন্তার নতুনত্ব তাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, সে এখন প্রচুর টাকার মালিক। নির্বাচন করতে গেলেই তো অনেক টাকা লাগে। নষ্ট করার মতো এত টাকা তার হয়ে গেছে।


ব্যবসা যখন করবেন, আপনাকে এই বুদ্ধি, এই নতুনত্ব, এই মেধাটাকে প্রয়োগ করতে হবে। চিন্তা করতে হবে-নতুন কোন ক্ষেত্রে তা করা যায়। ছোট হোক, কিন্তু নতুন ক্ষেত্র। কারণ সেখানে আপনিই প্রথম-দাঁড়িয়ে যেতে পারবেন প্রতিযোগিতা ছাড়া।


 


 


 


প্রশ্ন : আমার এক পরিচিতজন আছে, তার ভাগ্য খুব ভালো। খরিদ্দাররা তার দোকান ছাড়া কেনে না। আমার কেন যেন এ ব্যাপারে ভাগ্য খুব খারাপ।


উত্তর : এটা ভাগ্য নয়। এটা তার নিয়ত, তার দৃষ্টিভঙ্গি। আসলে একজন ব্যর্থ এবং সফল ব্যবসায়ীর মধ্যে পার্থক্য হলো-ব্যর্থ ব্যবসায়ী চিন্তা করে ‘কত দ্রুত লাভ করা যাবে’। আর সফল ব্যবসায়ী লাভ কম করে। সে তার ক্রেতার ওপর গুরুত্ব দেয়, যাতে এ লোকটি সবসময় এই দোকান থেকে কেনে। সফল ব্যবসায়ী অল্প লাভ করে বেশি জিনিস বিক্রি করে আর ব্যর্থ ব্যবসায়ী অল্প জিনিস বিক্রি করে বেশি লাভ করতে চায়।


অল্প জিনিস বিক্রি করে আপনি যদি বেশি লাভ করতে চান তবে আপনার ব্যবসা টিকবে না। একবার ঠকবে, দুইবার ঠকবে, তৃতীয়বার ক্রেতা আর আপনার কাছে আসবে না। এ প্রসঙ্গে একজন সফল ব্যবসায়ী একবার বলছিলেন, সাধারণ ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে লাভ করতে চায়। বিক্রি করে আসলে লাভ করা যায় না। লাভ করতে হয় কেনার সময়।


সন্তুষ্ট হলে আপনার ক্রেতারাই নতুন ক্রেতা নিয়ে আসবে। আর ক্রেতার সন্তুষ্টি নির্ভর করছে আপনার ওপর। এক তো হচ্ছে আপনার পণ্যের মান হতে হবে এমন যাতে ক্রেতা মনে করতে পারেন ভালো পণ্য কিনতে হলে আপনার দোকানই একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। আপনার কাছেই তাকে আসতে হবে। এই যে মামা পেঁয়াজু-প্রথম সে শুরু করেছিলো একটা টং দিয়ে। কিন্তু এখন শুধু পেঁয়াজু বিক্রি করে তার ঢাকা শহরে চারটা বাড়ি। কেন পেরেছে? ক্রেতার সন্তুষ্টি। যে কিনছে, সে নিজেকে প্রতারিত মনে করছে না। যেমন, এখনকার কিছু চাইনিজ জিনিসপত্র একবার কিনলে আর দ্বিতীয়বার কেনার ইচ্ছে হয় না। এর মধ্যে একজন এসে বললো, আট গিগাবাইটের পেনড্রাইভ একবার ঢোকালে আর দ্বিতীয়বার চলে না। চীনারা যে মার্কেট দখল করছিলো-এই দুই নম্বর কোম্পানিগুলো চীনাদের মার্কেটের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।


দ্বিতীয়ত, আপনার দোকানে যদি আরো কর্মচারী থাকে, ক্রেতার প্রতি তাদের আচরণ কেমন হচ্ছে সেদিকেও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন, আপনার কর্মচারীরা কি ক্রেতাকে যথাযথ সম্মান দেয়? মনোযোগ দিয়ে তার কথা শোনে? আন্তরিকভাবে জিনিস দেখায়? কোনো কারণে ক্রেতা পণ্য কিনতে না চাইলে তাকে কি কটু মন্তব্য করে? দোকানে ক্রেতা এলে আপনি এবং আপনার কর্মচারীরা কি খুশি হন? শুকরিয়া আদায় করেন?


অতএব দোকানের বিক্রি বাড়াবার জন্যে এই বাস্তব পদক্ষেপগুলো নিন। সবসময় ইতিবাচক থাকুন। সাধ্যমতো দান করুন। দেখবেন, ভাগ্য আপনার অনুকূলে চলে আসবে।


 


 


প্রশ্ন : আমরা দুজনে একটা প্রতিষ্ঠান চালাই কিন্তু আমার পার্টনার মাঝে মাঝেই বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে। মাঝে মাঝে তাকে চতুর মনে হয়। আমি বেরিয়ে যেতে চাইলে সে হাত-পা ধরা শুরু করে। এরকম বেশ কয়েকবার হয়েছে। অনেকে আমাকে আলাদা প্রতিষ্ঠান করতে বলে এবং আমি জানি তা আমি পারবো। আপনি বলে দিন-আমি কী করতে পারি?


উত্তর : ‘পার্টনার মাঝে মাঝেই বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে। মাঝে মাঝে তাকে চতুর মনে হয়।’ তার মানে পার্টনারের প্রতি আপনার আস্থা নেই। এটা না হলে তো আপনি পার্টনারশিপ বিজনেস করতে পারবেন না। কারণ পার্টনারশিপটাই হচ্ছে আস্থা বা বিশ্বাসের ব্যাপার।


এ ব্যাপারে ‘বে-ইস্টার্ন’ গ্রুপের জাকি-মোশাররফ জুটি এক চমৎকার উদাহরণ। ৫০ বছর আগে প্রথম যখন শুনলাম জাকি মোশাররফ, আমি ভাবলাম ‘জাকি মোশাররফ’ মানে একজন। পরে যখন তাদের অফিসে গেলাম, দেখলাম-দুজন মানুষ। একজন জাকিউদ্দিন আহমেদ, আরেকজন মোশাররফ হোসেন। এত বিশ্বস্ত পার্টনারশিপ খুবই বিরল। একইসাথে ব্যবসা করছেন, যেখানে যান একসাথে যান। বাড়ি করেছেন, সেটাও পাশাপাশি এবং একই ডিজাইন। দাওয়াত করলেও দুজনকেই করতে হয়। কারণ একজনকে ছাড়া আরেকজন যান না। ১২ তম ব্যাচে দুজন একসাথে কোয়ান্টাম মেথড কোর্স করেছেন। অর্থাৎ এটা হলো পার্টনারশিপ যে, আপনারা একে অপরকে সবকিছুতে সবসময়ই পাশে পাবেন। বিশ্বাস করতে পারবেন।


পার্টনারশিপ গড়ার আগেই আপনাকে চিন্তা করতে হবে-যাকে আমি পার্টনার করছি তার সাথে আমি চলতে পারবো কি না। কারণ, যাকে বিশ্বাস করতে পারবেন না তার সাথে আপনার ব্যবসা বেশিদিন চলবে না। আজ হলেও ভাঙবে, কাল হলেও ভাঙবে।


যৌথ ব্যবসার ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যা হচ্ছে-আমরা এখনো সামন্তবাদী বা তালুকদারি দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করছি, সঙ্ঘের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলতে পারছি না। আমরা মনে করি-আমি আমার মতন বুঝি, আমি চলবো আমার মতো। আর এর ফলেই আমরা বড় কিছু করতে পারি না।


অথচ দেখুন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে। ১৬০০ সালে কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হলো, তার দেড়শ বছর পর ১৭৫৭ সালে তারা এই উপমহাদেশ দখল করলো এবং ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লবের পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উপমহাদেশের ক্ষমতা হারালো।


অর্থাৎ একটা কোম্পানি ১৭৫৭ সাল থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত ১০০ বছর একটা উপমহাদেশ দখল করে থাকলো। কত প্রজন্ম এই কোম্পানি চলেছে আমরা খুব সহজে বুঝতে পারি। যারাই এই সঙ্ঘ-সংস্কৃতি অনুসরণ করেছে তারাই পৃথিবীর নিয়ন্ত্রক হয়েছে।


 


 


প্রশ্ন : ভেবেছিলাম ব্যবসা শুরু করবো। কিন্তু আমার চেহারা দেখলে সবাই কেমন করে যেন বুঝে ফেলে-আমাকে ঠকানো যায়। কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না।


উত্তর : যদি ব্যবসা করার যোগ্যতা থাকে আর আপনাকে দেখে যদি মনে হয় যে, আপনাকে ঠকানো যায় তাহলে তো খুব ভালো। আপনি জেনেশুনে খুব সরলতার ভান করতে থাকুন। অন্যরা ভাববে যে, তারা আপনাকে ঠকাচ্ছে। আসলে ঠকছে সে নিজে। এটা তো একটা বড় গুণ যে, কাউকে দেখে মনে হয় তাকে ঠকানো যায় কিন্তু আসলে সে তা নয় এবং সে অন্যদের এ অভিসন্ধিটা বুঝতেও পারে। আর এরকম ক্ষেত্রে তাকে কেউই ঠকাতে পারে না। উল্টো যে ঠকাতে চায় সে-ই ঠকে যায়।


 


প্রশ্ন : আমি একজন ব্যবসায়ী, দুইটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটাতে সর্বদা একটু সমস্যা লেগে থাকে। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানটি আকারে বড় অর্থাৎ বিনিয়োগ বেশি। আমি কী করতে পারি? দয়া করে জানালে উপকৃত হবো।


উত্তর : বড় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আরো মনোযোগী হতে হবে। মনোযোগী হলেই সমস্যা সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে। অর্থাৎ যেখানেই সমস্যা সেখানেই আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে।


 


 


 


প্রশ্ন : আগামী মাসে আমি বিজনেস শুরু করতে যাচ্ছি। মনে জোর পাচ্ছি না। ভয় হচ্ছে যদি লোকসান হয়? ভয়ে আমি ঘুমাতে পারি না। কী করবো?


উত্তর : আসলে নিজের মনের ভেতরে আগে সাহস আনতে হবে। বিশ্বাস আনতে হবে। ভয় পাওয়া মানেই হচ্ছে নিজের ওপরে বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। বিশ্বাস যখন আসবে তখন ভয়টা এমনিতেই কেটে যাবে। সাহস করতে না পারলে কেউ কখনো বড় কাজ করতে পারে না। আসলে যুক্তিসঙ্গত সীমার মধ্যে কোনোটাই ঝুঁকি নয় যদি বিশ্বাস এবং সাহস থাকে। কারণ আপনি এমন কিছু করতে যাচ্ছেন না যেটা এর আগে কেউ করে নি। এর আগে যেহেতু কেউ না কেউ পেরেছে অতএব আপনিও পারবেন। কাজেই লোকসানের ঝুঁকি নয়, আপনার অন্তর্গত ভয়ই হচ্ছে আপনার বাধা।


আর ব্যবসায়ে যদি আপনি এই নিয়ত নিয়ে নামতে পারেন যে, আপনি আপনার ক্লায়েন্টদের সেবা দেবেন, আপনার কর্মীদের একটা ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ দেবেন তাহলে আপনাকে কখনো লোকসানের ভয়ে ভীত হতে হবে না। একটা উদাহরণ দেই।


বিশ্ববিখ্যাত প্যানাসনিক কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা কনসুকি মাতসুশিতা জন্মেছিলেন ১৮৯৪ সালে পশ্চিম জাপানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। জুয়াড়ি বাবার অপরিণামদর্শিতার ফলে সবকিছু খুইয়ে পরিবারটি যখন পথে বসতে যাচ্ছিলো তখন আট ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট নয় বছর বয়সী মাতসুশিতা বাইসাইকেলের দোকানে ফুটফরমাশের কাজ করে ধরেন পরিবারের হাল। কিছুদিনের মধ্যেই সেটি ছেড়ে যোগ দেন ওসাকা লাইট কোম্পানিতে। দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার কারণে একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টরের পদে উন্নীত হলেও স্বপ্ন ছিলো তার আরো বড়। ভাবনা ছিলো মানুষকে কীভাবে আরো সেবা দেয়া যায়। উদ্ভাবন করলেন নতুন এক ধরনের লাইট-সকেট, প্রচলিতগুলোর চেয়ে যা অনেক ভালো।


কিন্তু মালিক এর উৎপাদনে রাজি হলেন না। অগত্যা-‘বল বল আপন বল’। চাকরি ছেড়ে দিলেন। স্ত্রী এবং তিনজন মাত্র সহকারী নিয়ে মাতসুশিতা শুরু করলেন তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। অর্থ নেই, ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা নেই এবং প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া বা ইলেকট্রিক বাল্ব উৎপাদনে কোনোরকম অভিজ্ঞতা নেই-এমন সহকারীদের নিয়ে একটানা কয়েক মাস কাজের পর তারা সফল হলেন। উৎপাদন তো হলো। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে দেখা দিলো বিপত্তি। পাইকারি বিক্রেতারা তার পণ্য নিতে চাইলো না পরিমাণে কম বলে। লেগে থাকলেন মাতসুশিতা। গুণগত মান বাড়িয়ে দিলেন। দাম কমালেন ৫০%। পত্রিকায় পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়ার অভিনব উপায় তিনিই প্রথম চালু করেন। হু হু করে বাড়তে লাগলো তার বিক্রি।


১৯২২ সাল নাগাদ মাতসুশিতার প্রতিষ্ঠান প্রতিমাসেই নতুন নতুন পণ্য নিয়ে হাজির হতে লাগলো। ব্যবসাক্ষেত্রে মাতসুশিতা দিলেন এক যুগান্তকারী ধারণা। প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে বাজারে প্রচলিত পণ্যের চেয়ে অন্তত ৩০% ভালো পণ্য দিতে হবে আর দাম কমাতে হবে অন্তত ৩০%। আফটার সেল সার্ভিস দেয়ার ধারণাটি মাতসুশিতাই চালু করেন।


কর্মীদের তিনি নিজ পরিবারের সদস্য বলে ভাবতেন। মহামন্দার সময় কোম্পানিগুলো যখন কর্মী ছাঁটাই করে মন্দা মোকাবেলার চেষ্টা করছিলো মাতসুশিতা তখন উৎপাদন কর্মীদের বিক্রয়কাজে নিয়োজিত করে চেষ্টা করেছেন ছাঁটাই না করে কীভাবে চলা যায়। সে সময় কর্মীদের আধবেলা কাজ করালেও বেতন দিতেন পুরোবেলার। এই ভালবাসার প্রতিদানও তিনি পেয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রবাহিনীর অভিযোগের মুখে কোম্পানি প্রধানের পদ ছেড়ে দিতে হলেও তার কর্মীরাই তাকে আবার ফিরিয়ে আনে কোম্পানিতে। তিনি বলতেন, একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান শুধু তার শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থই রক্ষা করবে না, রক্ষা করবে সমাজের স্বার্থও।


আপনি যদি মনে করে থাকেন-এত দান-দক্ষিণা করে মাতসুশিতার কী লাভ হলো, তাহলে ভুল করবেন। ১৯৮৯ সালে ৯৪ বছর বয়সে মৃত্যুর সময় তার ব্যক্তিগত সম্পদেরই পরিমাণ ছিলো তিন বিলিয়ন ডলার। ২০ হাজার কর্মীসমেত তার প্রতিষ্ঠান ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক ইলেকট্রনিক কোম্পানি। আমেরিকার কোনো ভিসিআর বিক্রির দোকানে গিয়ে যদি আপনি ব্র্যান্ড ভিসিআর খোঁজেন তাহলে দেখবেন সবগুলোই মাতসুশিতার।


আপনিও এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজে নেমে পড়ুন। কখনো লস করবেন না।


 


 


প্রশ্ন : আমি ইটের ব্যবসা করতে চাইছি। কিন্তু আমি মহিলা। আমার পক্ষে এ ব্যবসা কতটুকু শোভন হবে?


উত্তর : এটা কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েটসুলভ কোনো কথা হলো না। কারণ আমি বহু মহিলাকে ইট ভাঙতে দেখেছি। আর আপনি তো ইটের ব্যবসা করবেন। মহিলারা যদি ইট হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুঁড়া গুঁড়া করতে পারে আর আপনি ইটের ব্যবসা করতে পারবেন না এটা একটা কথা? তবে বাস্তবে ইটভাটা চালাতে হলে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। এর চেয়ে আরো অনেক ধরনের ব্যবসা আছে, যা করা আপনার জন্যে সহজ হবে।


Collected from: Quantum Method



ব্যবসা সম্পর্কিত প্রচলিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

1 comment:

  1. অসাধারণ হয়েছে...এই পোস্টের আকারের চেয়ে আরো তিন গুন বড় কমেন্ট করে ও এই পোস্টের গুন প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। আপনার প্রতিনিয়ত পোস্টের মান দেখে আমি সত্যিই আশ্চর্য হয়ে যাই।
    আপনি সত্যিই একজন জিনিয়াস �� এরকম একটি ব্লগের নিয়মিত পাঠক হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। সত্যি আজ অসম্ভব সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।স্যার এই সাইট টা আমি নতুন তৈরি করলাম একটু ঘুরে আসেন কেমন সাইট টা font copy and paste����

    ReplyDelete